নবজাতকের যত্ন নিন
<div class="row">
<a class="ml-3" href="http://epaper.puberkalom.com/epaper/m/26346/5e333582cbca7">http://epaper.puberkalom.com/epaper/m/26346/5e333582cbca7</a>
<div class="ml-3">
<br/>
দশ মাস অপেক্ষার পর যখন কোনও নতুন অতিথি আমাদের ঘর আলো করে এসে উপস্থিত হয়, পরিবারটি তখন খুশির আবেশে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। গোটা পরিবার ভেবে উঠতে পারে না তারা কীভাবে নবাগতর যত্ন নেবে। তখন অনেক সময়ই পরিবারে পুরনো ও নব্য পন্থীদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। শিশুটি কী খাবে, কী পরবে, কোথায় শোবে, ইত্যাদি নানা জিনিস নিয়ে নানান মতামতের শেষ নেই। আমাদের পরিবার গুলিতে এটি নতুন কিছু না। এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হয় বিজ্ঞানের দেখানো পথেই হাঁটা ঠিক হবে। পরামর্শে ডা. নিশান্তদেব ঘটক
<br/>
<br/>
নবাগতর যত কিন্তু শুরু হয়ে যায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঠিক পর থেকেই। শিশুটি যখন হসপিটালে থাকে তখনকার যত্ন ডাক্তারবাবু-নার্স দিদিমণিরাই নিয়ে নেন। এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বাড়িতে আসার পর থেকে। একরাশ প্রশ্ন পরিবারের সবার মনে দানা বাঁধতে থাকে। এই সব ছোটখাটো প্রশ্ন নিয়ে সব সময় ডাক্তারবাবু দের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই জন্য জরুরি কয়েকটি টিপস দিতে চাই।
<br/>
<br/>
প্রথমটি হল উঞ্চতা। এটি সদ্যোজাতের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেহেতু এদের ত্বকটি অপরিণত থাকে, তাই খুব সহজে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা এদের মধ্যে থেকে থাকে। সুতরাং সদ্যোজাতের পরিচর্যা মনে হয় এটি দিয়েই শুরু হওয়া উচিত। হাসপাতাল থেকে ছুটির পর শিশুটিকে এমন ঘরে রাখুন, যেটি আলো-হাওয়া যুক্ত। তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন শিশুটি থাকা অবস্থায় ঘরে যেন ক্রস ভেন্টিলেশন না হয়।
<br/>
<br/>
ঘরের উষ্ণতা এমন হবে যেন বাচ্চা ঠান্ডা না হয়ে যায় আর ঘেমেও না যায় সেই দিকে সতর্ক থাকতে হবে । সাধারণ ভাবে শীতকালে তিনটি স্তরের ও গরমে দুটি স্তরের পোশাক পরান। শীতকালে টুপি ও মোজা পরাতে ভুলবেন না। মাঝে মাঝে পায়ের তালু এবং পেটের তাপমাত্রা তুলনা করে দেখুন। যদি মনে হয় পায়ের তালু বেশি ঠান্ডা হয়ে গেছে, সাথে সাথে অতিরিক্ত পোশাক পরিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বরাবর আনার চেষ্টা করুন।
<br/>
<br/>
অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে যে শিশুটিকে কি এসি-তে রাখা যেতে পারে? উত্তরে বলি অবশ্যই। কেবল একটু খেয়াল রাখবেন ঘরের তাপমাত্রা কখনই যেন ছাব্বিশ ডিগ্রির কম না হয়। কখনও শরীরের তাপমাত্রা কমে গেছে দেখলে, অতিরিক্ত পোশাক পরান, শরীরের সঙ্গে স্ফিন কন্টাক্ট করিয়েও শিশুটিকে গরম করা যেতে পারে । বাচ্চার হাত-পা ঠান্ডা থাকলে ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যা হতে পারে। ওজনে কম, প্রিটার্ম বাচ্চাদের “কাঙারু মাদার কেয়ার" দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
<br/>
<br/>
এইবার আসি খাওয়ার প্রশ্নে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রথম ছমাস বুকের দুধই শিশুর একমাত্র খাদ্য। এতে করে শিশুটির বুদ্ধির বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি হয়, ফলে বড় রোগে ভোগার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং শিশুর সঠিক বৃদ্ধি হয়। অবাঞ্ছিত মেদের আধিক্য কমে যায়। নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ফর্মুলা দুধের তুলনায় মাতৃদুগ্ধ অনেকাংশেই এগিয়ে আছে। যে কথাটি না বললেই নয়, জন্মের ঠিক পরেই যে গাঢ় হলুদ রঙের দুধ স্তন থেকে নিঃসৃত হয় সেটিকে কলোস্ট্রাম বলে। এটি শিশুর জন্য ভীষণ জরুরি একটি জিনিস। সব সদ্য হওয়া মা-দের বলবো এইটি শিশুকে অবশ্যই খাওয়াবেন। প্রত্যেকবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে শিশুটিকে ঢেকুর তোলাতে ভুলবেন না।
<br/>
<br/>
এইবার আসি প্রস্রাব ও পায়খানার বিষয়ে । জন্মের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশুটি যদি সবুজ রংয়ের পায়খানা না করে তবে ডাক্তারবাবুকে অবশ্যই জানান। জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা বাচ্চা প্রস্তাব নাও করতে পারে, যদি তার পরেও না করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। সাধারণত সিজারিয়ান সেকশনের পর দুধের স্রোত ঠিক আসতে দু-তিন দিন সময় লেগে যায়। তাই তারপর থেকে প্রস্রাবও বেড়ে যায়। তারপরও যদি কখনও দেখেন দিনে ছ"' থেকে আট বারের কম প্রস্রাব করছে, তাহলেও ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। পায়খানা ৮, ১০ দিনে একবার বা দিনে ৮-১০ বারও যদি করে থাকে এবং শিশুটি শুধুমাত্র বুকের দুধ খেয়ে থাকে তাহলে খুব কিছু চিন্তিত নাও হতে পারেন।
<br/>
<br/>
তেল মাখা হল অত্যান্ত জরুরি একটি বিষয় যেটি আমাদের মত শিশু চিকিৎসকদের দৈনন্দিন এই সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমেই বলি সরষের তেল কোনভাবেই শিশুর ত্বকের লাগাবেন না। শীতের দিনে চাইলে নারকেল তেল লাগানো যায়। গরমের দিনে কোনও তেল না লাগালেও চলে।
<br/>
<br/>
বর্তমান সময়ে প্রতোক শিশুকে প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর আমরা ভিটামিন ডি ড্রপ দিয়ে থাকি। এইটি শিশুর হাড় ও মাংস পেশি সুঠাম করতে সাহায্য করে। যদি মনে হয় কোন শিশুর ত্বক শুষ্ক লাগছে, তাহলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ক্রীম লাগানো যেতে পারে।
<br/>
<br/>
চান করানো নিয়েও অনেক প্রশ্ন মা দের থেকে থাকে। যদি শিশুটি প্রিটার্ম না হয় অথবা জন্মের ওজন কম না হয় তাহলে জন্মের প্রথম দিন থেকেই হাত-সওয়া গরম জলে গা মোছান যেতে পারে। নাভিটি খসে গেলে স্নান করানো যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন থেকে দু'দিন সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
<br/>
<br/>
তবে মনে রাখবেন ঘরের মধ্যে যেন ক্রস ভেন্টিলেশন না হয় চান করাবার সময়। আর চান করার সাথে সাথেই শিশুটিকে শুষ্ক করে নিয়ে সঠিক পোশাক পরিয়ে গরম করে ফেলুন।
<br/>
<br/>
নাভির যত্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণভাবে নাভিটি ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যায়। অনেকে কাটা অংশের উপরে বিভিন্ন রঙিন আন্টিসেপটিক ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। এটি না করাই বাঞ্নীয়। এতে করে নাভির কোনও ইনফেকশন হলে সেটি ওই রঙের আড়ালে ঢেকে যায়। নাভি টিকে একদম শুষ্ক রাখুন। কোনও কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই যদি না ইনফেকশন হয়ে থাকে। যদি দেখেন নাভিটি ৩০ দিন পরেও পড়ল না তাহলে অবশ্যই ডাক্তার বাবুর সাথে যোগাযোগ করবেন।
<br/>
<br/>
ভ্যাক্সিনেশন আরেকটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুটির ছুটির আগে অবশ্যই বিসিজি, হেপাটাইটিস-বি, ওপিভি প্রথম ডোজ দিয়ে তবেই বাড়ি নিয়ে যান। তারপর শিশুচিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে সমস্ত ভ্যাকসিন দিন। মনে রাখবেন শিশুটি যদি চারাগাছ হয় ভ্যাকসিন হচ্ছে বেড়া। বেড়াটা যত ভালো করে দেবেন, গরু-ছাগল রূপী রোগদের থেকে শিশুটিকে তত নিখুঁত রূপে রক্ষা করতে পারবেন। রোগে ভোগার যন্ত্রণার থেকে রোগ প্রতিরোধ সমস্ত বাবা-মার কাছেই অনেক বেশি অভিপ্রেত।
<br/>
<br/>
সাধারণ যত্নের সাথে সাথে শিশুদের রোগ লক্ষণ জেনে রাখাটাও খুব জরুরি । যেমন যদি দেখেন শিশুটিকে খুব হলুদ লাগছে, ঠোঁট-নাকের ডগা এবং নখ, হাত ও পায়ের চেটো নীল হয়ে গেছে, শ্বাসকষ্ট হয়, জ্বর আসে, অতিরিক্ত বমি করছে, অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমায় অথবা অতিরিক্ত কান্না কাটি করে এবং মায়ের বুকের দুধ ঠিক করে টেনে খেতে না পারে, প্রস্রাব সারাদিনে ৬-৮ বারের চেয়েও কমে যায়, পেট যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফেঁপে যায়, যদি গায়ের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, পিত্তি রঙের বমি করে, শরীরের কোনো অংশ অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপে, কান দিয়ে রস বেরোয়। এছাড়াও যে কোনও লক্ষণ বিপজ্জনক মনে হলে আপনার ডাক্তার বাবুর সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।
<br/>
<br/>
অনুলিখন: পিয়ালী দে বিশ্বাস
<div>
<div>
নবজাতকের যত্ন নিন
দশ মাস অপেক্ষার পর যখন কোনও নতুন অতিথি আমাদের ঘর আলো করে এসে উপস্থিত হয়, পরিবারটি তখন খুশির আবেশে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। গোটা পরিবার ভেবে উঠতে পারে না তারা কীভাবে নবাগতর যত্ন নেবে। তখন অনেক সময়ই পরিবারে পুরনো ও নব্য পন্থীদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। শিশুটি কী খাবে, কী পরবে, কোথায় শোবে, ইত্যাদি নানা জিনিস নিয়ে নানান মতামতের শেষ নেই। আমাদের পরিবার গুলিতে এটি নতুন কিছু না। এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হয় বিজ্ঞানের দেখানো পথেই হাঁটা ঠিক হবে। পরামর্শে ডা. নিশান্তদেব ঘটক
নবাগতর যত কিন্তু শুরু হয়ে যায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঠিক পর থেকেই। শিশুটি যখন হসপিটালে থাকে তখনকার যত্ন ডাক্তারবাবু-নার্স দিদিমণিরাই নিয়ে নেন। এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বাড়িতে আসার পর থেকে। একরাশ প্রশ্ন পরিবারের সবার মনে দানা বাঁধতে থাকে। এই সব ছোটখাটো প্রশ্ন নিয়ে সব সময় ডাক্তারবাবু দের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই জন্য জরুরি কয়েকটি টিপস দিতে চাই।
প্রথমটি হল উঞ্চতা। এটি সদ্যোজাতের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেহেতু এদের ত্বকটি অপরিণত থাকে, তাই খুব সহজে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা এদের মধ্যে থেকে থাকে। সুতরাং সদ্যোজাতের পরিচর্যা মনে হয় এটি দিয়েই শুরু হওয়া উচিত। হাসপাতাল থেকে ছুটির পর শিশুটিকে এমন ঘরে রাখুন, যেটি আলো-হাওয়া যুক্ত। তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন শিশুটি থাকা অবস্থায় ঘরে যেন ক্রস ভেন্টিলেশন না হয়।
ঘরের উষ্ণতা এমন হবে যেন বাচ্চা ঠান্ডা না হয়ে যায় আর ঘেমেও না যায় সেই দিকে সতর্ক থাকতে হবে । সাধারণ ভাবে শীতকালে তিনটি স্তরের ও গরমে দুটি স্তরের পোশাক পরান। শীতকালে টুপি ও মোজা পরাতে ভুলবেন না। মাঝে মাঝে পায়ের তালু এবং পেটের তাপমাত্রা তুলনা করে দেখুন। যদি মনে হয় পায়ের তালু বেশি ঠান্ডা হয়ে গেছে, সাথে সাথে অতিরিক্ত পোশাক পরিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বরাবর আনার চেষ্টা করুন।
অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে যে শিশুটিকে কি এসি-তে রাখা যেতে পারে? উত্তরে বলি অবশ্যই। কেবল একটু খেয়াল রাখবেন ঘরের তাপমাত্রা কখনই যেন ছাব্বিশ ডিগ্রির কম না হয়। কখনও শরীরের তাপমাত্রা কমে গেছে দেখলে, অতিরিক্ত পোশাক পরান, শরীরের সঙ্গে স্ফিন কন্টাক্ট করিয়েও শিশুটিকে গরম করা যেতে পারে । বাচ্চার হাত-পা ঠান্ডা থাকলে ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যা হতে পারে। ওজনে কম, প্রিটার্ম বাচ্চাদের “কাঙারু মাদার কেয়ার" দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এইবার আসি খাওয়ার প্রশ্নে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রথম ছমাস বুকের দুধই শিশুর একমাত্র খাদ্য। এতে করে শিশুটির বুদ্ধির বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি হয়, ফলে বড় রোগে ভোগার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং শিশুর সঠিক বৃদ্ধি হয়। অবাঞ্ছিত মেদের আধিক্য কমে যায়। নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ফর্মুলা দুধের তুলনায় মাতৃদুগ্ধ অনেকাংশেই এগিয়ে আছে। যে কথাটি না বললেই নয়, জন্মের ঠিক পরেই যে গাঢ় হলুদ রঙের দুধ স্তন থেকে নিঃসৃত হয় সেটিকে কলোস্ট্রাম বলে। এটি শিশুর জন্য ভীষণ জরুরি একটি জিনিস। সব সদ্য হওয়া মা-দের বলবো এইটি শিশুকে অবশ্যই খাওয়াবেন। প্রত্যেকবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে শিশুটিকে ঢেকুর তোলাতে ভুলবেন না।
এইবার আসি প্রস্রাব ও পায়খানার বিষয়ে । জন্মের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশুটি যদি সবুজ রংয়ের পায়খানা না করে তবে ডাক্তারবাবুকে অবশ্যই জানান। জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা বাচ্চা প্রস্তাব নাও করতে পারে, যদি তার পরেও না করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। সাধারণত সিজারিয়ান সেকশনের পর দুধের স্রোত ঠিক আসতে দু-তিন দিন সময় লেগে যায়। তাই তারপর থেকে প্রস্রাবও বেড়ে যায়। তারপরও যদি কখনও দেখেন দিনে ছ"' থেকে আট বারের কম প্রস্রাব করছে, তাহলেও ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। পায়খানা ৮, ১০ দিনে একবার বা দিনে ৮-১০ বারও যদি করে থাকে এবং শিশুটি শুধুমাত্র বুকের দুধ খেয়ে থাকে তাহলে খুব কিছু চিন্তিত নাও হতে পারেন।
তেল মাখা হল অত্যান্ত জরুরি একটি বিষয় যেটি আমাদের মত শিশু চিকিৎসকদের দৈনন্দিন এই সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমেই বলি সরষের তেল কোনভাবেই শিশুর ত্বকের লাগাবেন না। শীতের দিনে চাইলে নারকেল তেল লাগানো যায়। গরমের দিনে কোনও তেল না লাগালেও চলে।
বর্তমান সময়ে প্রতোক শিশুকে প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর আমরা ভিটামিন ডি ড্রপ দিয়ে থাকি। এইটি শিশুর হাড় ও মাংস পেশি সুঠাম করতে সাহায্য করে। যদি মনে হয় কোন শিশুর ত্বক শুষ্ক লাগছে, তাহলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ক্রীম লাগানো যেতে পারে।
চান করানো নিয়েও অনেক প্রশ্ন মা দের থেকে থাকে। যদি শিশুটি প্রিটার্ম না হয় অথবা জন্মের ওজন কম না হয় তাহলে জন্মের প্রথম দিন থেকেই হাত-সওয়া গরম জলে গা মোছান যেতে পারে। নাভিটি খসে গেলে স্নান করানো যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন থেকে দু'দিন সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে মনে রাখবেন ঘরের মধ্যে যেন ক্রস ভেন্টিলেশন না হয় চান করাবার সময়। আর চান করার সাথে সাথেই শিশুটিকে শুষ্ক করে নিয়ে সঠিক পোশাক পরিয়ে গরম করে ফেলুন।
নাভির যত্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণভাবে নাভিটি ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যায়। অনেকে কাটা অংশের উপরে বিভিন্ন রঙিন আন্টিসেপটিক ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। এটি না করাই বাঞ্নীয়। এতে করে নাভির কোনও ইনফেকশন হলে সেটি ওই রঙের আড়ালে ঢেকে যায়। নাভি টিকে একদম শুষ্ক রাখুন। কোনও কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই যদি না ইনফেকশন হয়ে থাকে। যদি দেখেন নাভিটি ৩০ দিন পরেও পড়ল না তাহলে অবশ্যই ডাক্তার বাবুর সাথে যোগাযোগ করবেন।
ভ্যাক্সিনেশন আরেকটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুটির ছুটির আগে অবশ্যই বিসিজি, হেপাটাইটিস-বি, ওপিভি প্রথম ডোজ দিয়ে তবেই বাড়ি নিয়ে যান। তারপর শিশুচিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে সমস্ত ভ্যাকসিন দিন। মনে রাখবেন শিশুটি যদি চারাগাছ হয় ভ্যাকসিন হচ্ছে বেড়া। বেড়াটা যত ভালো করে দেবেন, গরু-ছাগল রূপী রোগদের থেকে শিশুটিকে তত নিখুঁত রূপে রক্ষা করতে পারবেন। রোগে ভোগার যন্ত্রণার থেকে রোগ প্রতিরোধ সমস্ত বাবা-মার কাছেই অনেক বেশি অভিপ্রেত।
সাধারণ যত্নের সাথে সাথে শিশুদের রোগ লক্ষণ জেনে রাখাটাও খুব জরুরি । যেমন যদি দেখেন শিশুটিকে খুব হলুদ লাগছে, ঠোঁট-নাকের ডগা এবং নখ, হাত ও পায়ের চেটো নীল হয়ে গেছে, শ্বাসকষ্ট হয়, জ্বর আসে, অতিরিক্ত বমি করছে, অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমায় অথবা অতিরিক্ত কান্না কাটি করে এবং মায়ের বুকের দুধ ঠিক করে টেনে খেতে না পারে, প্রস্রাব সারাদিনে ৬-৮ বারের চেয়েও কমে যায়, পেট যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফেঁপে যায়, যদি গায়ের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, পিত্তি রঙের বমি করে, শরীরের কোনো অংশ অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপে, কান দিয়ে রস বেরোয়। এছাড়াও যে কোনও লক্ষণ বিপজ্জনক মনে হলে আপনার ডাক্তার বাবুর সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।
অনুলিখন: পিয়ালী দে বিশ্বাস